ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হওয়া নতুন কৃষি সংস্কার বিল ২০২০ এর প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দেশটির কৃষক সংগঠনগুলো মিলিতভাবে ভারত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছিল যাতে কংগ্রেস-সহ ভারতের অধিকাংশ বিরোধীদল সমর্থন জানিয়েছে।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে এই আন্দোলনের প্রভাব সবথেকে বেশি। অমৃতসর, জালন্ধর, লুধিয়ানা, আম্বালা, চণ্ডীগড়ের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। জালন্ধরের কাছে সকাল থেকেই অমৃতসর-দিল্লি জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন ও রেভোলিউশনারি মার্ক্সিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া। আম্বালাতে বিক্ষোভের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দিল্লি-চণ্ডীগড় বাস চলাচল। কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি বৃহস্পতিবার থেকেই পাঞ্জাবজুড়েই ‘রেল রোকো’ অভিযান চালিয়ে আসছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং বিক্ষোভকারী কৃষকদের করোনাভাইরাস সুরক্ষাবিধি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার আবেদন জানিয়েছেন। এনডিএর শরিক শিরোমণি আকালি দলও এই বিলের প্রতিবাদে সারা পাঞ্জাবজুড়ে প্রায় তিন ঘণ্টার ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচি পালন করে। কৃষি সংস্কার বিল ২০২০-এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে কর্নাটকের রাজ্য কৃষক সংগঠনগুলো। বোম্মানহালিতে কর্নাটক-তামিলনাড়ু জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের কৃষকরা। মহারাষ্ট্রেও বিক্ষোভ করেছে বাম সমর্থিত অল ইন্ডিয়া কিষান সভা। রাজ্যের প্রায় ২১টি জেলাতে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন কিষান সভার ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্য। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় চিল্লাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এদিকে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেসও। কৃষি বিলের বিরুদ্ধে ২ কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযান শুরু করেছে তারা। যুব কংগ্রেস দেশের নানা স্থানে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি মোদি সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিলের ব্যাপারে সকলকে ভুল বুঝিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই বিলের ফলে দেশের কৃষক শ্রেণি কর্পোরেটের দাসত্বের শিকার হবে। রাহুল গান্ধী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ক্রুটিপূর্ণ জিএসটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ধ্বংস করেছে। নতুন কৃষি আইন আমাদের কৃষকদের ক্রীতদাস বানাবে। ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের পাঞ্জাব ইউনিটের সদস্য হরিন্দর সিং লাখোয়াল বিবিসি হিন্দি-কে বলেছেন, সরকার এই সংস্কার থেকে সরে না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।
তবে এই লাগাতার বিক্ষোভের মধ্যেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষি বিলের সমর্থনে কথা বলেছেন। তার কথায়,কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থে কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে এবং বিপথে চালিত করছে।
শুক্রবার এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি কর্মীদেরকে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে নতুন কৃষি বিলের গুরুত্ব সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে তাদেরকে বোঝানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের এই প্রচেষ্টায় ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সব গুজব এবং মিথ্যা প্রচারের অবসান ঘটবে।