নাটোরজুড়ে বন্ধ হাট, লোকসানের মুখে ইজারাদাররা

আমিরুল ইসলাম: নাটোরে করোনা ভাইরাসের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন ইজারাদাররা। হাট বন্ধ থাকার কারণে লাখ লাখ টাকা হারিয়ে পথে বসতে চলেছে ছোট-বড় হাট ইজাদাররা।

এমতাবস্থায় সরকারি অনুদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। নতুবা লাখ লাখ টাকা পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ইজারাদারা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় মোট ১৭১ টি সাপ্তাহিক ও দৈনিক হাট বাজার রয়েছে। প্রতি বছর সরকার এই সব হাট ও বাজার ইজারার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে আসছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মরণঘাতক করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশেও স্থবির হয়ে পড়েছে সবকিছু।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের কারণে জনসমাগম বন্ধ করার লক্ষ্যে সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল জেলার সকল সাপ্তাহিক হাটগুলো। দৈনিক বাজারগুলো দিনের নির্দিষ্ট সময় বসলেও সেগুলোও বন্ধ থাকছে সিংহভাগ সময়।

নাটোর জেলার হাটগুলোর মধ্যে ঐতিহ্যবাহি ও বৃহত্তম হাট তেবাড়িয়া হাট, মৌখাড়া হাট, চাচকৈড় হাট, নলডাঙ্গা হাট, সিংড়া হাট, হাতিয়ান্দহ এবং জামতৈল ধানের হাট।

করোনা ভাইরাসের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে এই হাট গুলো। এতে করে হাটের ইজারাদাররা লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন। এছাড়াও হাট বন্ধ থাকায় কৃষকরা ও তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষি পন্যগুলো বিক্রি করতে না পারায় লোকসানে পড়েছেন। কারণ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এই হাটগুলোতে এসে পণ্য কিনে বিভিন্ন অন্য জেলায় পাঠাতো ।

তেবাড়িয়া হাটের ইজাদার মোস্তারুল ইসলাম আলম বলেন, সরকারি ইজারার মাধ্যমে আইটি ও ভ্যাট দিয়ে মোট ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মাধ্যমে এক বছরের জন্য তেবাড়িয়া হাট ইজারা নিয়েছি। কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের কারণে ১৩টি হাট বসানো সম্ভব হয় নাই। সপ্তাহের একদিন এই হাটটি বসানো হতো। ধান, পাটসহ অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি গরু ও ছাগল বিক্রি এই হাটের আয়ের প্রধান উৎস।

তিনি আরো বলেন, গরু ও ছাগলের জন্য জেলার মধ্যে অন্যতম এই হাট। প্রতিবার হাট বন্ধ থাকায় আমার প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। আর কতদিন যে হাট বন্ধ থাকবে তা বলা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই সরকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য খাতে কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সারা দেশের কয়েক লাখ হাট-বাজার ইজারাদারদের জন্য কিছুই ঘোষণা করা হয়নি। তাহলে হাট ও বাজার বন্ধ থাকার কারণে আমরা লাখ লাখ টাকা পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে চলেছি।

মোস্তারুল ইসলাম আলম আরো বলেন, হাট বসলেও সরকারকে রাজস্ব দিতে হয় আবার না বসলেও দিতে হচ্ছে তাহলে আমরা কোথায় যাবো। সরকারি ভাবে আমাদেরকে যদি কোন সহায়তা না দেওয়া হয় তাহলে পুঁজি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিক্ষা করেও অন্ন জোটানো সম্ভব হবে না।

মৌখাড়া হাটের ইজারদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, চলতি বৈশাখ মাসে প্রায় ১কোটি ৫২ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে হাটটি ইজারা নিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকেই হাট বসানো বন্ধ করা হয়েছে। এতে আমি কয়েক লাখ টাকার লোকসানে পড়েছি। জানি না আর কতদিন হাট বসানো বন্ধ থাকবে।

তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে দাবি যে কয়েকদিন হাট বন্ধ থাকবে সে কয়েক দিনের টাকা হয় মওকুফ করে দিন আর না হয় প্রণোদনা প্রদান করুক। তা না হলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিন্তু সর্বশান্ত হয়ে যাবো। তাই প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দেন।

নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাঙ্গাঙ্গীর আলম বলেন, সারা দেশে একই অবস্থা। আমি মনে করি সরকার অবশ্যই কেন্দ্রীয়ভাবে হয়তো এই বিষয়ে কোন না কোন সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়াও আমি ইজাদারদের এই ক্ষতির বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা নিশ্চয় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

নাটোর পৌরসভার মেয়রও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি উমা চৌধুরী জলি বলেন, হাট ইজারাদাররাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদেরওকে প্রণোদনার আওতায় আনা উচিত তা না হলে তাদের অনেকেই পুজি হারিয়ে পথে বসবে। আমি অবশ্যই সরকারের নীতি নির্ধারকদের এই বিষয়ে দ্রুত পজেটিভ পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাবো।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *