ভোট জালিয়াতি এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বেলারুশ সরকারের সহিংসতার অভিযোগে গতকাল বুধবার প্রেসিডেন্ট লুকাশেংকো ছাড়াও তাঁর ছেলে এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ তাঁদের সম্পদ জব্দ করেছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ বেলারুশের চলমান সঙ্কটে এই প্রথম দুই পশ্চিমা শক্তির নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে এরকম কোনও পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়নি। যেসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তারা হলেন, লুকাশেঙ্কো, তার ছেলে ভিক্টর, প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ ইগর সার্জেনকো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইউরি কারায়েভ, উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার বার্সুকভ, ইউরি নাজারেনকো, উপ-অভ্যন্তরীণ ট্রুপ কমান্ডার খজলবেক আতাবেকভ ও মিনস্ক দাঙ্গা পুলিশ প্রধান দিমিত্রি বালাবা।
বেলারুশে গত ৯ অগাস্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে লুকাশেঙ্কো ফের বিজয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিরোধী দলগুলো ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আনে এবং ভোটের ফল প্রত্যাহার করে ওই দিন রাত থেকেই বিক্ষোভ শুরু করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষক দলও ভোটে অস্বচ্ছতার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায়। লুকাশেঙ্কো এ সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। ভোটের স্বচ্ছতা প্রশ্নে গণবিক্ষোভ কিংবা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক আহ্বান; সবকিছু উপেক্ষা করেই লুকাশেঙ্কো টানা ষষ্ঠ মেয়াদের জন্য বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন করে শপথ নিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসা বিরোধীপক্ষ এই শপথ অবৈধ বলে নিন্দা জানিয়ে আরও বিক্ষোভের ডাক দেয়। বিক্ষোভ দমনে শুরু থেকেই বলপ্রয়োগ করে আসছে প্রশাসন। চলমান বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, “আমরা যা দেখছি- এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং জালিয়াতির নির্বাচনের জন্য লুকাশেঙ্কোর মূল্য দেওয়া উচিত।” কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, “বেলারুশের জনগণের পাশে আমাদের দাঁড়ানোর এখানেই শেষ নয়। এটি কেবল প্রথম পদক্ষেপ। আরও কি কি করা যায় তা ঠিক করতে আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির বিচারে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।”
মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রথম বড় একটি পশ্চিমা দেশের নেতা হিসাবে বেলারুশের বিরোধীদলীয় নেতা সভেৎলনা তিখানভস্কায়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। লিথুনিয়ার একটি হেটেলে ৪৫ মিনিটের ওই বৈঠকের পর ম্যাক্রাঁ বলেন, “আমাদেরকে বাস্তববাদী হতে হবে এবং বেলারুশের জনগণকে সমর্থন দিতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব।” ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) বেলারুশের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে জানিয়েছে। তবে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার এই তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।