রাজশাহীতে আমের ফ্রুট-ব্যাগিং শুরু : করোনা-দুশ্চিন্তায় চাষিরা

ছবি: সংগৃহীত
নিরাপদ, বালাইমুক্ত আম উৎপাদন করেও গেল বছর বিদেশে রপ্তানি করতে পারেননি রাজশাহীর বেশিরভাগ চাষি। কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষার কড়াকড়িতে তার আগের বছর আম পাঠানো সম্ভব হয়েছিল খুব সামান্যই। বিদেশের বাজার ধরতে চলতি বছরেও বেশ কয়েকজন চাষি ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদন করছেন। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত বিদেশে আম পাঠানো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, এবার বিমান বন্ধ। আম রপ্তানির কী যে হবে তা বুঝতে পারছি না! বিদেশে আম রপ্তানি করতে চান, এমন কোনো ব্যবসায়ী এ পর্যন্ত আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি রাখছি। বেশ কয়েকজন চাষি উন্নত প্রযুক্তিতে আম উৎপাদন করছেন। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা আর ক’দিন পর বোঝা যাবে।
বিদেশে রপ্তানির জন্য জেলায় এবার এক লাখ ১৫ হাজার আম ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া এলাকায় শফিকুল ইসলাম সানা নামের এক চাষি ১০ হাজার আমে ব্যাগিং করেছেন। পবার হরিপুর, কসবা এবং মহানগরীর জিন্নানগরেও কিছু আম ব্যাগিং করা হয়েছে। কিন্তু চাষিরা রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তাই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেশি পরিমাণ আমে ব্যাগিং করার সাহস পাচ্ছেন না তারা।
জিন্নানগরে ১০ হাজার খিরসাপাত ও ল্যাংড়া আমে ব্যাগিং করেছেন রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত রপ্তানিকারক কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। তারপরেও উন্নত প্রযুক্তিতে নিরাপদ ও বালাইমুক্ত কিছু আম উৎপাদন করছি। বিদেশে পাঠাতে না পারলেও দেশেই যদি ঠিকমতো আম বাজারজাত করা যায় তাহলে হয়তো লোকসান হবে না। সে আশাতেই করছি। জানি না কী হবে!
গত বছর ৪০ হাজার আমে ব্যাগিং করেছিলেন আনোয়ারুল হক। বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার কানবার হোসেন বর আনোয়ারুলের বাগানে যান। নিজ হাতে আম পেড়ে খান। বলেছিলেন, রাজশাহীর আম খুব সুস্বাদু। স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু আনোয়ারুল বিদেশে আম পাঠাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে দেশের বাজারেই ব্যাগিং করা ৪০ হাজার আম ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন তিনি।
আনোয়ারুল বলেন, সর্বশেষ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঠিকঠাকমতো আম ইউরোপের বাজারে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ঢাকায় প্ল্যান কোয়ারেন্টাইন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে কোয়ারেন্টাইনের নামে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়। সামান্য দাগ থাকলেই আম বাদ দেয়া শুরু হয়। ফলে তারা আম পাঠাতে পারেননি। এবারও করোনার কারণে হয়তো পারবেন না।
আশার বাণী শোনাতে পারেনি কৃষি বিভাগও। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, গতবার তো ৩৬ মেট্রিক টন আম পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। এবার কি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে চাষিরা ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করছেন। আম নামানোর দুই মাসে আমে ব্যাগ পরাতে হয়। এক মাস আগে কিছু খিরসাপাতে ব্যাগিং করা হয়েছে। কিছু দিন পর ল্যাংড়া, ফজলি ও আশি^নায় ব্যাগিং করা হবে।
রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ব আম নামানো ঠেকাতে গেল কয়েক বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সে অনুযায়ী গাছে পাকলেই গত শুক্রবার (১৫ মে) থেকে সব ধরনের গুটি আম নামানোর সময় শুরু হয়েছে। কিন্তু চাষিদের গাছে এবার আম পাকেনি। কেবল আঁটি এসেছে। আরও অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে পরিপক্ক হতে। তাই এখনই আম ভাঙছেন না রাজশাহীর চাষিরা। বাজারেও নেই আম।
বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী, আগামী ২০ মে থেকে গোপালভোগ নামাতে পারবেন চাষিরা। এছাড়া রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা ২৫ মে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আম।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *