রিদমের কন্ঠে সুন্দর পৃথিবী

গানের মূল কথাটি হলো “সুন্দর পৃথিবী মিলেমিশে থাকি, সুন্দর পৃথিবী ভালবেসে বাঁচি।”

সারা দুনিয়া করোনা মহামারীতে কাঁপছে। যখন মানুষ নিজের ঘরে বন্দী, যখন অচেনা অদৃশ্য আতংকে ভীত শংকিত মানবজাতি ঠিক তখন গাছের পাতাটি আরো সবুজ, আকাশের রঙ আরো নির্মল, পাখির কণ্ঠ তখন আরো সুরেলা, সাগর পাড়ে মাছেরা নির্ভয় ঠিক তখনই বুনন হয় গানটির কথা মালা। মানুষ, প্রকৃতি ও দুনিয়ার যা কিছু সকলে মিলেমিশে ভালবেসে বাসযোগ্য পৃথিবী বি-নির্মাণের আহ্বান নিয়ে এ গান, বলছিলেন “সুন্দর পৃথিবী “এ গানের গীতিকার জান্নাতুল বাকের নন্দন।

তিনি আরো বলেন, ঘরে থাকার দিনগুলিতে লিখে ফেললাম মানুষ আর প্রকৃতির ভালবাসায় বেঁচে থাকার গান। আমার ছোট ছেলে রিদম, গানে তার দারুণ আগ্রহ ও চেষ্টা। বাবা-ছেলে দুজনে মিলেই গানটির সুর করা। রিদমের কন্ঠে গানটি বসেছেও চমৎকারভাবে।

আর গল্পে গল্পে একদিন চিত্র পরিচালক আসিফ ইসলামের সাথে গানের বিষয়টি আলোচনা হলো, তিনি  গানের কথা শুনে অডিও ও ডিজিওলাইজেশনের জন্য উৎসাহ দিলেন। কাজটি করতে নিজেই যুক্ত হলেন ও দায়িত্ব নিলেন। তিনিই আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন তরুণ গায়ক ও সংগীত পরিচালক সৈয়দ নাফিসকে। তারপর সবাই মিলে একটা দলবদ্ধ কাজ সম্পন্ন করা।

এই গানের শিল্পী বিন ইয়ামিন খান রিদম, যার কথা বলতে শেখা আর গান করা এক সাথে শুরু। বয়স মাত্র দশ, পড়ছে পিএসসি। তিন বছর বয়সেই গানে হাতেখড়ি। নিয়মিত শিখছে গুণী শিল্পী ও গানের শিক্ষক পুজান দাশের কাছে।

মঞ্চে প্রথম গান পাঁচ বছর বয়সে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে সাইদুজ্জামান রওশনের হাত ধরে প্রথম আলো বন্ধুসভার অনুষ্ঠানে।

পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত চর্চা করছে গানের। বাসায় রয়েছে সঙ্গীতের বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্র। গান করতে ও বাজাতে তার দারুণ চেষ্টা ও আগ্রহ রয়েছে। গানের ভূবনে আনুষ্ঠানিক যাত্রা তার বাবার লেখা এই মৌলিক গানে। কথা হলো রিদমের সাথে। তিনি বলেন, করোনার সময়ে বাসায় থাকতে থাকতে এক ঘেয়েমি লাগছিলো। একদিন বাবাকে বললাম, আমি ভালো করে গিটার শিখতে চাই। আমি বলার পরদিনই বাবা আমার জন্য একজন টিচার ঠিক করে দেন। এর ক’দিন পর বাবা এই গানটা আমাকে দিয়ে বলেন, দেখ তো কিছু তুলতে পারো কিনা। ২/৩ দিনের মধ্যেই আমি পুরো গান তুলে ফেলি। তারপর জামিল স্যারকে দেখাই। স্যার কিছু জায়গা ঠিক করে দেন। এই পুরো গান তোলা, রেকর্ডিং এবং শ্যুটিং সবকিছু মিলে দারুণ কিছু একটা হলো জীবনে, আমি অনেক খুশি ।

এতো অল্প বয়সে এতো কম সময়ে কিভাবে সম্ভব হল জানতে চাইলে রিদম জানায়, আরও ছোটবেলা থেকেই তার গান শেখা।

আব্বু-আম্মু আর নিজের ইচ্ছাতে ৩ বছর বয়সে গানের প্রথম হাতেখড়ি। প্রথমে গানের স্কুল গমক থেকে, তারপর শিল্পী ও প্রশিক্ষক পুজান কুমার দাসের কাছে, এখনও শিখছি। আর গিটারের প্রথম শিক্ষা পাই আমার বড় ভাই ডিউ সারগামের কাছ থেকে। ভাইয়া খুব ভালো গিটার বাজায়, এখন কানাডাতে পড়ছে। তাকে দেখেই গিটারের প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়।

গান রিলিজ হওয়ার প্রসঙ্গে রিদম জানায়, “আব্বু-আম্মু, আমার ভাইয়া,পুজান স্যার,জামিল স্যার, নাফিস আংকেল, আসিফ আংকেল আমার জন্য অনেক করেছেন। তাদের প্রতি আমার ভালবাসা। এটা আমার প্রথম মৌলিক গান এবং মিউজিক ভিডিও।

গান করতে আমি খুব ভালবাসি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন গানটা ভাল করে শিখতে পারি ।

সংগীত পরিচালক সৈয়দ নাফিস বলেন, “গান বানানোর অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা সব সময়ই, তাছাড়া নতুন কিছু পাবার আশা তো থাকেই। সুরের এই খেলায় একটু রহস্যময়তাও থাকে। এই গানের চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক আসিফ ইসলাম জানালেন, প্রকৃতি নিয়ে তো এখন খুব একটা গান হয় না। তবে নন্দন ভাই প্রকৃতি নিয়ে একটা গান লিখেছেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় নন্দন ভাইয়ের লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছে উনারই ছেলে ১০ বছরের রিদম। যেদিন নন্দন ভাই আর রিদমের সাথে প্রথম দেখা সেদিনই রিদম যেভাবে সারল্যতা নিয়ে আপন করে গানটা গেয়েছে, আমিও চিন্তা করলাম কোন ভারিক্কি না রেখে খোলা মনে মিউজিকটা যতোটা আপন করে করা যায়, সেই চেষ্টাই করব। সেভাবেই পুরো কাজটা শেষ পর্যন্ত করেছি। দর্শক শ্রোতারা দেখলেই বুঝতে পারবেন, এতো ছোট বয়সে প্রফেশনালি চমৎকারভাবে গানটা নিজে ধারণ করে কতোটা দরদ দিয়ে রিদম গেয়েছে।

সুন্দর পৃথিবী “গানটির চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক আসিফ ইসলাম বলেন,

আমি মূলত গানটির কথা, বিষয়, রিদমের বয়স ও চমৎকার গায়কী বিবেচনা করেই এর কাজের সঙ্গে যুক্ত হই। নন্দন ভাই, আমি, নাফিস ও রিদম সময় নিয়ে অনেক ভালবাসা আর যত্নে পুরো কাজটি করেছি । আমার মনে হয় এই মানের এই বয়সের কোন শিল্পীর এই ধরনের কাজ বাংলাদেশে প্রথম। আমি বিশ্বাস করি, সকল দর্শক শ্রোতা গানটি দারুণ উপভোগ করবেন।

উল্লেখ্য, অক্টোবরের শুরুতে কক্সবাজারের ইনানী ও স্যুয়াইন খালীতে গানটির দুই দিনব্যাপী শুটিং হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *