৭৪ এ পা দিলেন দূরদর্শী নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ফাইল ছবি

দেশের দূরদর্শী নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ । গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি।তার শৈশব কাটে পিত্রালয়ে।

৫৪-র নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাবা-মার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। বর্তমানে শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন নতুন ভূমিকায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।

১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করেছিল। তারপর আওয়ামী লীগ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছিল না, ভেতরের-বাইরের নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে না পারায় ১৯৮১ সালে দলের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে দিল্লিতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয় ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তিনি এক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনেন। এক কথায় বলা যায়, তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেন। ১৯৭৫-এর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবে– সেটা অনেক রাজনৈতিক পণ্ডিতের কাছেও ছিল অকল্পনীয়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার অপচেষ্টা অনেকেই করেছে। এমন কি দলের মধ্যেও ছিল ‘ঘর শত্রু বিভীষণ’। শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি বানিয়ে যারা তার মাথায় কাঁঠাল ভাঙার ফন্দি এঁটেছিলেন তাদেরও তিনি হতাশ করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সবাইকে এটা বোঝাতে সক্ষম হন যে, তিনি শেখ মুজিবের কন্যা, তিনি কারো হাতের পুতুল হতে পারেন না।

৩৯ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনা কেবল সেই মহান নেতার কন্যা এবং তাঁর রাজনীতির উত্তরসূরি হিসেবে গণমানুষের প্রধান নেতার আসনে স্থান পাননি, তিনি জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, হত্যা প্রচেষ্টাসহ হাজারো হুমকির মুখে অটল থেকে নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রি শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কান্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। সাগর সমান অর্জনে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতির কর্মময় জীবন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় ছাত্রনেত্রী থেকে জননেত্রীতে পরিণত হওয়া শেখ হাসিনার জন্মদিন পালিত হবে অতি সাধারণভাবেই।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তাঁর সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তৃতীয় মেয়াদেই ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত আছে।

দক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সারাবিশ্বের অনেক সম্মানজনক পদকে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সমুদ্র জয়ের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশও জয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে, বিশ্ববিবেককে। আজ সারা বিশ্বেই তাঁর নাম আলোচিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’, ‘মানবতার মা’ হিসেবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *