ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেট, রাজস্ব আদায়ে পরিধি বাড়াল ডিএসসিসি

ছবি: সংগৃহিত

উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট ঘোষণা করেছে ডিএসসিসি।বাজেটের রাজস্ব আদায়ে পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এই বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোরও সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে নয়। বরং করের পরিধি বা ক্ষেত্র বাড়িয়ে সেটা করতে চায় ডিএসসিসি। সিটি করপোরেশনটি এবার নতুন ১৯টি সেক্টর নির্ধারণ করেছে এবং সে সব সেক্টর বা খাত হতে প্রথমবারের মতো রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে।

উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বাজেট বাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ হাজার ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সম্প্রতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন- ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩ হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল। পরে সংশোধিত বাজেট দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। গত বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার অনেক বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯ কোটি ২ লাখ টাকা, অন্যান্য আয় ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা, সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রারম্ভিক স্থিতি ধরা হয়েছে ১৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ২০২০-২১ সালের বাজেটে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি, মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫০৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯টি খাতে নতুনভাবে কর ধার্য করতে যাচ্ছে ডিএসসিসি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- টিউটোরিয়াল স্কুল, কোচিং সেন্টার নিবন্ধীকরণ ফি; প্রাইভেট হাসপাতাল, প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিবন্ধীকরণ ফি; করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত হোটেলের ওপর নগর কর, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজে নিযুক্ত প্রাইমারি কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার নিবন্ধন ও বার্ষিক ফি; ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানে রাস্তা ব্যবহারের ফি, রিকশা লাইসেন্স ফি, ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদনের ওপর কর; নগরে ভোগ, ব্যবহার বা বিক্রয়ের জন্য পণ্য আমদানির ওপর কর; নগর থেকে পণ্য রফতানির ওপর কর, টোল জাতীয় কর, পেশা বা বৃত্তির ওপর কর, জনসেবামূলক কার্যসম্পাদনের ওপর কর, সরকার থেকে আরোপিত করের ওপর কর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ট্রেনিং সেন্টার প্রভৃতির ওপর কর; মেলা, কৃষি প্রদর্শনী, শিল্প প্রদর্শনী, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য জনসমাবেশের ওপর কর; বিবাহ, তালাক, দত্তক গ্রহণ ও জিয়াফত বা ভোজের ওপর কর; পশুর ওপর কর, বাজারের ওপর ফি (ইজারা) এবং অন্যান্য খাতকে নতুন করে করের আওতায় আনা হচ্ছে।

মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবারের বাজেট বিষয়ে বলেছেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটের আকার বিগত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এবারের বাজেটের অন্যতম দিক হলো, বটম-আপ পলিসিকে গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলরবৃন্দ ও সংসদ সদস্যগণের উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানো। এর ফলে, কাউন্সিলরবৃন্দ ও সংসদ সদস্যগণ জনগণের প্রত্যাশাকে আরও বেশি পরিমাণে ধারণ করতে সমর্থ হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এবারকার বাজেটে ডিএসসিসির ৭৫টা ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের উন্নয়ন ব্যয় এক কোটি টাকা করা হয়েছে। ডিএসসিসির অধিভুক্ত এলাকায় ৮টি সংসদীয় আসন রয়েছে। সেসব সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যদের বর্তমান উন্নয়ন ব্যয় ২ কোটি টাকা করা হয়েছে। নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে নতুন ১৯টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯টি খাতে নতুনভাবে কর ধার্য করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে বিগত সময়ে এসব খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়নি। এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদরা অনেকেই মনে করছেন, এখানে যেসব খাত নতুনভাবে ধরা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, এসবের জন্য সিটি করপোরেশনকে ইতোমধ্যে কর দেয়া হচ্ছে।

তারা বলছেন, ‘আমাদের দেখতে হবে দেশের মানুষের এরকম কর দেয়ার সক্ষমতা আছে কি না। সিটি করপোরেশন চাইলে আরও বিভিন্নভাবে রাজস্ব আয় করতে পারে। জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া উচিত।’

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, এবার বাজেটের উল্লেখযোগ্য আয়ের খাতগুলো মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৯ কোটি ২ লাখ টাকা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৩৫০ কোটি, বাজার সালামি বাবদ ১৬৫ কোটি, বাজার ভাড়া বাবদ ৫০ কোটি, এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ ১০০ কোটি, বিজ্ঞাপন কর বাবদ ৫০ কোটি, বাস-ট্রাক টার্মিনাল হতে ১০ কোটি, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ১২ কোটি, ইজারা (টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার ইত্যাদি) বাবদ ৪৫ কোটি, রাস্তা খনন ফিস বাবদ ৪০ কোটি, রিকশা লাইসেন্স ফিস বাবদ ২৪ কোটি, ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানে রাস্তা ব্যবহারের ফিস বাবদ ১২ কোটি, টোল জাতীয় কর বাবদ ১২ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ ১০ কোটি, প্রাইভেট হাসপাতাল, প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিটউট, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদি নিবন্ধন ফি বাবদ ১০ কোটি, প্রাথমিক বর্জ্য সেবা সংগ্রহকারী নিবন্ধন ও বাৎসরিক ফিস বাবদ ৯ কোটি, টিউটোরিয়াল স্কুল, কোচিং সেন্টার ইত্যাদি নিবন্ধন ফি বাবদ ৫ কোটি, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া বাবদ ৩ কোটি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ৬০ কোটি, ক্ষতিপূরণ (অকট্রয়) বাবদ ৬ কোটি, ইমারত নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদনের ওপর কর বাবদ ৫ কোটি, পেট্রল পাম্প বাবদ ২ কোটি ৮৯ লাখ এবং অন্যান্য ভাড়া (ভূমি, নাট্যমঞ্চ, ছিন্নমূল ও নগর ভবন ইত্যাদি) ২ কোটি টাকা আয় হবে।

আরও পড়ুন : জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

এছাড়া সরকারি মঞ্জুরি (থোক) থেকে ৫০ কোটি ও সরকারি বিশেষ মঞ্জুরি বাবদ ১০০ কোটি, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প খাতে ৪ হাজার ৭৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পাওয়ার আশা করছে সংস্থাটি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *