উত্তরবঙ্গের দল জাতীয় পার্টি, এজন্য বঞ্ছনার শিকার : জিএম কাদের

রাজনীতিতে এবং উন্নয়ন বরাদ্দে রংপুর অঞ্চল বিভিন্ন ভাবে বৈষম্য ও বঞ্ছনার শিকার হয়েছে দাবি করে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘উত্তরবঙ্গ বিভিন্ন ভাবে বৈষম্যের শিকার। আমাদের জাতীয় পার্টি মোটামুটি একটা উত্তরবঙ্গের দল। হয়তো সেকারণেও বিভিন্ন ভাবে বঞ্ছনার শিকার। রংপুর সিটি কর্পোরেশন আয়তনের দিক থেকে বিশাল। কিন্তু এখানে বরাদ্দ খুব সামান্যতম দেয়া হয়। এটাও উত্তরবঙ্গের প্রতি একটা বৈষম্য, বিশেষ করে রংপুর বিভাগের প্রতি। আরেকটা বৈষম্য জাতীয় পার্টির প্রতি। সিটি মেয়র মোস্তফা পর পর দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও তাকে সাধারণ ভাবে কোনো পদমর্যাদা দেয়া হয়নি। এটাও একধরণের বঞ্ছনা-বৈষম্য। এটার ব্যাপারে আমরা সংসদে কথাও বলেছি, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। রোববার(২৪ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর চেম্বার ভবনে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির যৌথ উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা হয়তো অনেকসময় সফল হতে পারছি না। তার জন্য আমরা নিরাশ নই। সামনের দিকে আল্লাহর রহমতে আমরা যদি সংসদে যাই, তখন আমরা জোরালো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব। এবং আপনাদেরকে সাথে নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে হলেও রংপুরের জন্য আমাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায় করব। আমার কাছে মনে হয় রংপুর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন এখন বড় সমস্যা। অল্প বৃষ্টি হলেই শহরে পানি জমে যায়। এটা শুধু রংপুরে নয় বাংলাদেশের প্রায় বড় বড় শহরগুলো এমন সমস্যা রয়েছে। পয়নিষ্কাশনের জন্য শ্যামাসুন্দরী খালকে যেমন খনন করা দরকার, তেমনি আরও কিছু খালের ব্যবস্থা করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, ‘আগে শহরের পাড়ামহল্লায় ছোটবড় একটা করে পুকুর বা কুয়া থাকত। খেলার মাঠ থাকত, আরেকটা করে প্রাইমারী স্কুল থাকত। এসব সরকারি তরফ থেকে বা স্বায়তশাসিত ভাবে দেয়া হতো। এখন শহর সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে আমাদের বেসিক নীডসগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আগুন লাগলে পানি দেয়ার মতো কোনো পুকুর-খালবিল কিছু নেই সব ভরাট হয়ে গেছে। রংপুর শহরের জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান দরকার। ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য এটা জরুরি।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘রংপুরে শিল্পায়ন দরকার। শিল্প-কলকারখানা না হলে এখানে গ্যাস আসবে না। গ্যাস এখন বিশ্বব্যাপী অনেক এক্সপেনসিভ হয়েছে। সরকার এখন বাড়ি বাড়ি গ্যাস দেয়ার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ দিবে না। এটা আর লাভজনক নয়। সরকার এখন শিল্প-কলকারখানায় গ্যাস দিবে। কাজেই রংপুরে যখন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে, তখন সরকার নিজের থেকেই দিবে। আমরা রংপুরে শিল্পায়ন ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করব। এবং গ্যাসের সংযোগের জন্য চেষ্টা করব। এটা সম্ভব হলে এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বেকার সমস্যার সমাধান হবে।’

এসময় নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মঙ্গল কামনা করে বলেন, ‘আমি মনে করে ওনার (তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী) আরো উত্তরোত্তর মঙ্গল হোক। আমি ওনার ভালো কামনা করি। আমার যদি সুযোগ থাকত আমি ওনাকে প্রমোট করতাম। ওনি যাতে আরো ভালো অবস্থানে যেতে পারেন, এজন্য আমি তাকে সহযোগিতা করব।’

মতবিনিময় সভায় রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ও জেলা সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর-৩ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এস এম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক।

এছাড়াও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও কারমাইকেল কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি আলাউদ্দিন মিয়া, পার্টির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্য শাফিউল ইসলাম শাফী, জেলা যুব সংহতি সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, মহানগর ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত আসিফসহ রংপুর চেম্বার ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (লাঙল) ছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক (ডাব), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সহিদুল ইসলাম (মশাল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম (আম) এবং তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রংপুর সদর ও সিটি কর্পোরেশনের ৯থেকে ৩৩নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৪ জন ও পুরুষ ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে দুইজন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *