করোনায় বিশ্বে মৃত্যু পাঁচ লাখ ছুঁইছুঁই, সংক্রমণে শীর্ষে আমেরিকা

লকডাউন ঘোষণা করে এবং বিধিনিষেধ আরোপ করেও বেঁধে রাখা গেল না করোনাভাইরাসকে। গত ডিসেম্বরের গোড়ায় চীনে প্রথম থাবা বসায় যে নোভেল করোনাভাইরাস, তারই সংক্রমণের শিকার এবার ১ কোটি ছাড়িয়ে গেল। রবিবার পর্যন্ত বিশ্বে ১ কোটি ৫ হাজার ৯৭০ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে  করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও প্রায় ৫ লক্ষ ছুঁইছুঁই। করোনার প্রকোপে এখন পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩০৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

মানবশরীরে কবে প্রথম করোনা থাবা বসায়, তা যদিও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে গত বছরের ডিসেম্বরের গোড়ায় চীনের উহানেই প্রথম এই ভাইরাস থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। তার মাস দেড়েক পর চীনা মেনল্যান্ড থেকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং থাইল্যান্ডে ছড়ায় সংক্রমণ। উহানফেরত এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২১ জানুয়ারি সংক্রমণ পৌঁছায় আমেরিকায়।

তার পর থেকে যত দিন গিয়েছে, তরতর করে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ বছর ৩ এপ্রিলের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা এসে ঠেকে ১০ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৬৭-তে। সংখ্যাটা ৫০ লক্ষে পৌঁছায় ৪৮ দিনে। ২১ মে বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১ লক্ষ ২ হাজার ২৩-এ। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি হতে সময় লাগল মাত্র ৩৮ দিন। এ দিন বাংলাদেশ সময় বিকাল চারটা পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এসে ঠেকে ১ কোটি ৫ হাজার ৯৬০-এ।

সংক্রমণ ছড়ানোর পাশাপাশি গোটা বিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও। তবে শুরুর দিকে প্রতিদিনের মৃত্যুসংখ্যা কয়েকশো করে বাড়লেও, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তা কয়েক হাজার করে বাড়তে শুরু করে। গত ১০ এপ্রিল মৃত্যুসংখ্যা এসে ঠেকে ১ লক্ষ ৯৬৭-তে। রবিবার সেই সংখ্যাটা ৫ লক্ষে এসে পৌঁছতে সময় লাগল ৭৯ দিন।

আক্রান্তের নিরিখে এই মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ লক্ষ ১০ হাজার ৩২৩। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৬৭। ৬ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৪২ জন আক্রান্ত নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা ভারত ও ব্রিটেনে আক্রান্তের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫ লক্ষ ২৮ হাজার ৮৫৯ এবং ৩ লক্ষ ১১ হাজার ৭২৭-এ।

ছবি: বিশ্বে মোট করোনা সংক্রমণ

কোভিড-১৯-এর প্রকোপে মৃত্যু সংখ্যার নিরিখেও এই মুহূর্তে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। রবিবার পর্যন্ত সেখানে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৫৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রিটেনে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ হাজার ৫৯৮ জন। তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকা ইতালি ও ফ্রান্সের মৃত্যুসংখ্যা যথাক্রমে ৩৪ হাজার ৭১৬ এবং ২৯ হাজার ৭৮১-তে এসে পৌঁছেছে।

বছরের শুরু থেকে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণ যেভাবে বেড়েছে, গত কয়েক মাসে তাতেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির শুরুতে যেখানে প্রত্যেক দিন ২ থেকে ৪ হাজার নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ছিল, মার্চের মাঝামাঝি তা ১০ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে পৌঁছে যায়। এপ্রিলের শুরুতে আবার তা সর্বোচ্চ ৯২ হাজার পর্যন্ত ওঠে। বর্তমানে তা ১ লক্ষ ৫০ থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।

তবে যে চীন থেকে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে, গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি আয়ত্তে এনে ফেলেছে তারা। আগেভাগে সতর্কতা পাওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ পশ্চিমা দেশগুলো এখনও করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে; কিন্তু মাহামারি পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে চীন। আক্রান্তের নিরিখে গোটা বিশ্বে ২১তম স্থানে রয়েছে তারা। রবিবার পর্যন্ত সেখানে ৮৪ হাজার ৭৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রভাবে সেখানে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে সক্রিয় সংক্রামিতের সংখ্যা ৫১১। করোনার প্রকোপ থেকে চীনে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭৯ হাজার ৫৯১ জন।

অন্য দিকে, দীর্ঘ সাত মাস ধরে নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেলেও, এখনও পর্যন্ত এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে এর প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। তবে আগামী বছরের শেষ দিকে তা হাতে পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন।

আনন্দবাজার পত্রিকা
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *