ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এবারের বাজেট : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে রক্ষা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে প্রণীত হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ ক্রান্তিলগ্নে প্রাধিকার পেয়েছে দেশের মানুষ।

সোমবার (২৯ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাজেটটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু আমরা বাজেট বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশাবাদী। এই বাজেট বস্তাবায়ন সম্ভব। গত পাঁচ বছরে আমরা বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম, আমাদের প্রকৃত অর্জন প্রতি বছরই তার চেয়ে বেশি ছিল। বিগত ১০ বছরে জিডিপিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৮ শতাংশ, যা বিশ্বে সবার ওপরে। আমাদের কাছাকাছি চীন ছিল ১৭৭ শতাংশ নিয়ে এবং ভারত ১১৭ শতাংশ। গত ১১ বছরে আমাদের জিডিপি’র আকার বেড়েছে ৩ গুণ।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দ্য ইকোনমিস্ট চলতি বছরের ২ মে গবেষণামূলক একটি প্রতিবেদনে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশ রয়েছে ৯ম শক্তিশালী অবস্থানে। গত ১১ জুন এই মহান জাতীয় সংসদে আমরা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেছি। এর মাত্র সাতদিনের মাথায় গত ১৮ জুন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশের একেবারে কাছাকাছি।’

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এই রেফারেন্সে প্রতীয়মান হয় যে, আমরা বাজেটটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। এই বাজেট বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে দেশের সকল মানুষ, যারা আমাদের প্রাণশক্তি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে তাদের জন্য লক্ষাধিক কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যখাতকে। স্বাস্থ্যখাতে আগামী অর্থবছরে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের শিকড়ের সন্ধানে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের শিকড় হলো- কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি। এজন্য কৃষিখাতকেও বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে এখনও আমাদের শতকরা ৪০ ভাগের মত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই কৃষিখাতই হতে পারে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক মৌলিক পন্থা। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা এ অঞ্চলের অনেকের খাদ্যের যোগান দিতেও সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। আমাদের কঠোর পরিশ্রমী আত্মপ্রত্যয়ী কৃষক ভাইদের কারণে সম্প্রতি আমরা ইন্দোনেশিয়াকে পিছনে ফেলে বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছি। গত ৫০ বছরে আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ, যা বিশ্বে একটি রেকর্ড।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এবারের বাজেট। কোভিডের কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ কৃষক, শ্রমিক, মজুর, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, বেদে, স্বাস্থ্যকর্মী, ভ্যানচালক, রিকশাওয়ালাসহ সকল পেশার মানুষ, পান দোকান, চা দোকান, মুদি দোকান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র, কুটির ও ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ী, সকল শ্রেণি ও নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, যারা কষ্টে আছেন তাদের সকলের জন্য এ বাজেট। দেশের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এ বাজেট  থেকে বাদ দিতে পারি নাই। কাউকে বাদ দিতে পারলে বাজেটের আকার অবশ্যই ছোটো রাখা যেত; ছোটো রাখা যেত বাজেট ঘাটতিও। কিন্তু সত্য যে বড়ো কঠিন, তাই সব জেনেশুনে আমরা এই কঠিনকেই  ভালোবেসেছি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *