”পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটা মানুষই একটি করে আলাদিনের চেরাগ নিয়ে আসেন, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই চেরাগ থেকে ঘুমন্ত দৈত্য কে জাগাতে পারে।” -যাদুকর (হুমায়ূন আহমেদ)
আজ সেই যাদুকর-এর জন্মদিন । ভেবেছিলাম শুধুমাত্র জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্ষান্ত হব, কিছুই লিখব না। কিন্তু উনি এমনই এক যাদুকর, অদ্ভুত এক মায়ার জাল ছড়িয়ে আছেন আমাদের চারপাশে!
যেমন ধরুন ওনার কথা মনে করতেই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল হলুদ পাঞ্জাবি, খালি পায়ে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ানো এক তরুণের কথা। যার জন্য নীল শাড়ি পড়ে জানালায় দাঁড়িয়ে থাকতো রুপা নামের একটি মেয়ে।
মনে পড়ে সিগারেট ফুকতে ফুকতে ফুসফুস নষ্ট করে ফেলা এক প্যারাসাইকোলজির প্রফেসরের কথা যিনি এই পৃথিবীর সকল রহস্যর সমাধান খুঁজে বেড়ান।
সঠিক মনে নেই ২০০৬ অথবা ২০০৭ হবে, প্রথম যাদুকরের সাথে আমার পরিচয়। হিমুর কোন একটা সিরিজ দিয়ে শুরু । তার বই পড়তে পড়তে কেমন জানি একটা ঘোর লাগা কাজ করত।
ধীরে ধীরে মিসির আলি সহ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস গুলো পরে ফেললাম, শেষ বেলায় দেয়াল-এ এসে থামলাম। জীবনে চলার অনেকটা গতি পেয়েছি তার বই পড়েই। তিনিই শিখিয়েছিলেন কিভাবে জ্যোৎস্না দেখতে হয়, খালি গায়ে নৌকাতে শুয়ে কিভাবে পূর্ণিমা ধারায় স্নান করতে হয়, কিভাবে দুঃখগুলো শূন্য উড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় ।
আজ রুপার মত বলতে ইচ্ছে করে বর্ষার প্রথম কদম ফুল হাতে দাড়িয়ে আছি, যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো। জানি যাদুকর আর আসবে না।
হিমুর বাবা বলেছিলেন মহামানবদের দুঃখ, কষ্ট, সুখ, আনন্দ, বেদনা এগুলো কিছুই থাকতে নেই। মহামানবরা থাকবে এইগুলোর ঊর্ধ্বে। পৃথিবীর সকল মায়াকে জয় করাই মহামানবদের কাজ। তবুও আমার মত হাজারো হিমুরা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারেনি। পৃথিবীর জ্যোৎস্না, পূর্ণিমা ও বৃষ্টির মাঝে কোথায় যেন মহামানবগুলো তাদের পথ হারিয়ে ফেলেছে!
পৃথিবী থেকে যাদুকর চলে গেছে রেখে গেছেন তাঁর টুকরো টুকরো যাদুগুলো।
যাদুকর বলতেন মানুষের মৃত্যু হয়: স্বপ্নের মৃত্যু হয় না। জীবনভর নিজে স্বপ্ন দেখেছেন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। যাদুকর প্রকৃতি ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন মেঘ, বৃষ্টি আর জ্যোৎস্না। তার অভিমান ছিল ভালোবাসার মতই কঠিন তীব্র। অভিমানী যাদুকর অভিমান করে চলে গিয়েও বেঁচে আছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায়।
আর কখনো হিমু তাঁর হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটবেনা। মানুষকে বিভ্রান্ত করবেনা। মিসির আলি “ফিফটি ফাইভ” সিগারেটে টান দিয়ে গম্ভীর হয়ে কোনো কিছুর যুক্তি দাঁড় করাবেনা। শুদ্ধতম শুভ্র কে আর ‘কানাবাবা’ শুনতে হবে না।
মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে ওপারে কেমন আছেন যাদুকর! মনে হয় তাঁর অমর সৃষ্টি গুলো পৃথিবীতে রেখে তিনি ওপারের বারান্দায় পায়চারী করছেন তাদেরই অপেক্ষায়।
ভাল থাকবেন যাদুকর।
শুভ জন্মদিন, হুমায়ূন আহমেদ ।