টাঙ্গাইলে অভিভাবকদের জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগ

টাঙ্গাইলে নানা কৌশলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অভিভাবকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইনমেন্ট, মাসিক বেতনসহ নানা কৌশলে টাকা আদায় করা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে টাকা না নেয়ার নির্দেশ দিলেও তা তোয়াক্কা করছে না অসাধু শিক্ষকরা। এতে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। তাই টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা যায়, বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে গত (১৮ মার্চ) থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে সরকার। তারপর থেকে প্রায় ৮ মাস যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাশ দেয়ার কথা রয়েছে। টাঙ্গাইলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০৪টি। কিন্তু টাঙ্গাইলের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের জিম্মি করে ফি, অ্যাসাইনমেন্ট, মাসিক বেতনসহ নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

টাকা দিতে অস্বীকার করলে শিক্ষার্থীদের স্কুল মাঠে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছে, অনলাইনে ক্লাশ হলেও হত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন না থাকায় তার অনলাইন ক্লাশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবু হত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে মুখ চেনা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে কম টাকা নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ মিজানুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, হুগড়া হাব্বি কাদের উচ্চ বিদ্যালয়, ধরেরবাড়ী মুসলিম হাইস্কুল এন্ড কলেজ, গালা আহসান উচ্চ বিদ্যালয়, রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, কাবিলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালপুর হোমল্যান্ড স্কুল এন্ড কলেজ, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী প্রতি ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। শহীদ জাহাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয়ের শামীম নামের এক অভিভাবক বলেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা নানা কৌশলে অভিভাবকদের কাছ থেকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। শিক্ষারা বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫শ’ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা আদায় করেছেন। টাকা না দিতে চাইলে তারা শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। টাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অপর অভিভাবক আবুল কালাম বলেন, সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও তারা টাকা আদায় করছে। তবে এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলমের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। ধরেরবাড়ী হাইস্কুল এন্ড কলেজের আনিছুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, এটি গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্ট ফোন নেই। তাই তারা অনলাইনের ক্লাশে অংশ নিতে পারে না। অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইনমেন্টের টাকা নেয়া হচ্ছে। টাকা দিতে দেরী হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীকে মাঠের মধ্যে দাড় করিয়ে রেখেছে। তবে ধরেরবাড়ী হাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলামকে বার বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কাবিলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা খুবই গরীব। করোনায় স্কুল বন্ধ। তার পরও এসএসসির ফরম ফিলাপের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই মহুর্তে টাকা জোগাড় করা খুব কষ্ট। শহীদ মিজান উচ্চ বিদ্যালয়ের রাজিবা হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এর আগেও পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকা করে আদায় করেছেন। এখন আবার অ্যাসাইনমেন্ট ও মাসিক বেতনের জন্য চাপ দিচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা সারা বছরের টাকা দাবি করছে। গোপালপুর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি এখনও নিবন্ধিত হয়নি। তারপরও আমার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। আমার মতো আরো অনেকের কাছ থেকে এ রকম টাকা নেয়া হচ্ছে। আবার পরীক্ষার জন্য আরও ৫০০ টাকা করে দাবি করা হচ্ছে। আমার মতো গরীব পরিবারের পক্ষ থেকে এতো টাকা দেয়া খুব কষ্টকর।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি শামীম আল মামুন জুয়েল বলেন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অর্ধেক মাসের বেতন নেয়া হচ্ছে সেই বিষয় জানি। তবে পরীক্ষার ফি ও অ্যাসাইনমেন্টের কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, করোনার মধ্যে পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইমেন্ট ও মাসিক বেতন নেয়ার কোন নিয়ম নেই। কেউ যদি নিয়ে থাকে তাহলে তারা ঠিক করছেন না। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উপরের নির্দেশনা আসার পর থেকে মাসিক বেতন নেয়া যাবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *