বানভাসিদের সব হারানোর শোক বাড়িয়ে দিচ্ছে বিনোদন প্রেমীদের উচ্ছ্বাস

ছবি: মর্নিং নিউজ বিডি.কম

মাসুদ রানা: চলমান বন্যায় ধরলা নদী পানিতে পরিপূর্ণ হওয়ায় নয়নাভিরাম অপরুপ সৌন্দর্যে সেজেছে নদী তীরবর্তী এলাকা। ধরলার এই অপরুপ সৌন্দর্য এক মুহুর্ত উপভোগ করার জন্য জেলা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন বিনোদন প্রেমী মানুষজন ধরলা সেতু ও নদী রক্ষা বাঁধে। নদীর পাড়ে বেড়াতে এসে কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা  প্রিয়জনের পাশে বসে গল্প করে অতিবাহিত করছেন সময়। দূর্যোগকালীন সময়ে বিনোদন প্রেমীদের এরকম আনন্দে বিব্রত বোধ করছেন ধরলা সেতু সংলগ্ন নদী রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেয়া বন্যার্ত মানুষজন।

শুক্রবার (৩ জুলাই) বিকেলে ধরলা সেতু সংলগ্ন নদী রক্ষা বাঁধের এক প্রান্তে বিনোদন প্রেমীদের ভীড় ও অন্য প্রান্তে অসহায় বানভাসীদের আশ্রয়ের এমন চিত্র দেখা যায়।

ধরলা নদীর পূর্ব প্রান্তে সড়কে আশ্রয় নেয়া বানভাসি হোসনে আরা, মেরিনা ও শাহিদা জানান, আমাদের বাড়ি ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর মাধবরাম গ্রামে। বন্যার পানিতে আমাদের ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় আমরা ধরলা নদীর পূর্ব পাশে সড়কে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা খেয়ে না খেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি। আমাদের এই কষ্টের সময়ে শহরের মানুষজনের ধরলা পাড়ে এসে আনন্দ করার দৃশ্য দেখে আমরা খুবই কষ্ট পাচ্ছি।

ধরলা সেতু সংলগ্ন নদী রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেয়া- ববির উদ্দীন, সবুজ ও নুরল হক জানান, বন্যার পানিতে আমাদের ভিটেমাটি তলিয়ে গেছে। আমরা গরু, ছাগল, হাস-মুরগি নিয়ে পরিবারের সবাই মিলে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। অথচ শহর থেকে মানুষজন এসে বাঁধে জমায়েত হয়ে আনন্দ করছেন। এতে আমাদের খুবই খারাপ লাগছে।

বাঁধে ঘুরতে আসা কুড়িগ্রাম পৌর শহরের কলেজ শিক্ষার্থী- নিলয় সম্রাট ও মাসুম জানান, আমরা শহরে ব্যস্ত সময় পার করি। তাই একটু বিনোদন পাবার আশায় নদী রক্ষা বাঁধে এসেছি। কিন্তু বন্যার মতো এরকম দূর্যোগকালীন সময়ে ধরলা নদীর বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষ গুলির পাশে এসে বিনোদন কিংবা আনন্দ করাটা ঠিক নয়।

কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার চর হরিকেশ পাড়া গ্রামের জিয়াউল হক, মোস্তফা, রাজু জানান, আমাদের জেলার চার ভাগের তিন ভাগ লোক বন্যা কবলিত। অনেকের বাড়ীতে এক মুঠো খাবারও নেই। বন্যার্ত অনেক মানুষ উঁচু রাস্তায় ও ধরলা সেতু সংলগ্ন নদী রক্ষা আশ্রয় নিয়েছে। এই দূর্যোগকালীন সময়ে বন্যার পানিকে বিনোদন কেন্দ্রস্থল না ভেবে অসহায় বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

সামাজিক সংগঠন গ্রীণ ভয়েসের জেলা সাধারণ সম্পাদক সুজন মোহন্ত বলেন, এরকম বন্যাকালীন সময়ে আমাদের উচিত অসহায় বানভাসি মানুষ গুলির পাশে দাঁড়ানো। আমাদের প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। বন্যার মতো দূর্যোগকালীন সময়ে বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলির পাশে এসে বিনোদন করা মোটেও ঠিক নয়।

আরও পড়ুন: সুন্দরবন রক্ষার্থে বাগেরহাট জেলা পুলিশের বিশেষ অভিযান

উল্লেখ্য, স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সন্ধা ৬ টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত ২১ ঘন্টার ব্যবধানে শুক্রবার (৩ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি সামন্য হ্রাস পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ঘর-বাড়ি থেকে বন্যার পানি না নামতেই আবারো পানি বৃদ্ধি শংকার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। এমনিতেই এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে রয়েছে। বন্যা যদি আরো দীর্ঘায়িত হয় তাহলে চরম খাদ্য সংকটে পড়তে হবে বানভাসি মানুষদের।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *